সুন্দরবন ঘেঁষা কারখানা প্রয়োজনে বন্ধ: নতুন করে সমীক্ষার উদ্যোগ
সুন্দরবনের আশপাশের শিল্পকারখানা প্রয়োজনে বন্ধ করে দেয়া হবে। সার্বিক বিষয় পর্যালোচা করে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সুন্দরবন দূষণ হচ্ছে কীনা তা দেখতে নতুন করে সমীক্ষা করা হবে।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আজারবাইজানের ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে’র কমিটির ৪৩তম পর্বে সুন্দরবন নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে সে বিষয় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম। এসময় তিনি একথা বলেন।
বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রাখতে ইউনেসকোর বোর্ডসভায় তিনটি পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তার অন্যতম সুন্দরবনের পাশে শিল্পকারখানার দূষণ প্রতিরোধ করা।
সুন্দরবনের প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও পানিপ্রবাহের ওপর সমীক্ষা করা হবে। এর উপর ভিত্তি করে ২০২০ সালের বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪৪তম অধিবেশনে সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হবে কি হবে না, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চারপাশের শিল্পকারখানা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না, তা মূল্যায়ন করে দেখা হবে। সুন্দরবনের চারপাশে ১৫৪টি শিল্পকারখানা আছে। এবিষয়ে ইউনেস্কো যে তথ্য চেয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন দেয়া হবে। পর্যবেক্ষণে যদি দেখা যায় কারখানাগুলো সুন্দরবনের ক্ষতি করছে তাহলে সেগুলো বন্ধ করে দেয়ারও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ চলবে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, এর পরেও যদি কোনো সুপারিশ পাওয়া যায় তবে তা বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী আড়াই বছরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে। সুন্দরবন নিয়ে ইউনেস্কোর দাবির প্রেক্ষিতে সরকার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘উন্নত দেশগুলো সব সময় মনে করে অন্যদেশগুলো তাদের অধীনস্থ হয়ে থাকবে। এ কারণেই অনেকে বিরোধিতা করেছেন। ইউনেস্কো যে সুন্দরবন নিয়ে কমেন্ট করেছে সেটি ছিল এক ধরনের স্টুপিড কমেন্ট। আমাদের উপস্থাপিত প্রতিবেদন দেখার পর তারা কিছুটা লজ্জাও পেয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এছাড়া একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করছে সরকার।
২১টি দেশের মধ্যে ১৬টি দেশ বাংলাদেশকে সমথর্ন করেছে বলে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘সুন্দরবনের আয়তন বেড়েছে। ১৯৯৬ সালে ছিল চার লাখ ৩৬ হাজার ৬৩৬ হেক্টর। ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী তা বেড়ে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭৪৩ হেক্টর। এ সময় ম্যানগ্রোভ বনের পরিমান ২৩ দশমিক দুই থেকে বেড়ে হয়েছে ২৬ ভাগ।’
পরিবেশ দূষণের বিষয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর থেকে যে কার্বন নিঃসরণ হয় তা নিয়ন্ত্রণের আধুনিক কোনো প্রযুক্তি এখনো হয়নি। অন্যদিকে কেন্দ্র থেকে নিঃসরিত সালফার ডাই-অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড নিয়ন্ত্রণে এফজিডি (ফ্লু গ্যাস ডি সালফারাইজেশন) বসানো হচ্ছে। এতে ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ ফ্লু গ্যাস নিঃসরণ কমানো সম্ভব। এছাড়া থাকে ছাই। ছাই ধরতে এস ক্যাচার ব্যবহার করা হবে। ফলে ছাই বাতাসে বা নদীর পানিতে মিশবে না। আর বাকি থাকে পানি। পানি পুনঃব্যবহারের জন্য পরিশোধন করা হবে। এই পানি এতটাই নিরাপদ যে এটি পানের যোগ্য।
পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, আমরা সুন্দরবন সুরক্ষায় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এখন সেটি অনুমোদনের জন্য প্ল্যানিং কমিশনে আছে।
পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক জানান, সুন্দরবন তথা মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৫৪টি শিল্প কল কারখানা আছে। এর মধ্যে ২৪টি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কারখানা আজকের নয়। ৬০-৭০ বছরের পুরানো। ফলে কারখানাগুলো পরিবেশের সঙ্গে খাপখাইয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ওই এলাকায় এখন আর বড় কোনো শিল্পের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। এমনকি রামপালের দ্বিতীয় ইউনিটও করা হচ্ছে না। ওরিঅনের বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে।