কৃষিতে ডিজেলের ব্যবহার কমছে
সেচ যন্ত্র বাড়লেও কৃষিতে ডিজেলের ব্যবহার কমছে। বিদ্যুৎ ব্যবহার বেশি হওয়ায় তেলের চাহিদা কমে যাচ্ছে। চলতি কৃষি সেচ মৌসুমে প্রায় ১২ শতাংশ কম ডিজেল ব্যবহার হবে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারনা করছেন। গত কয়েক বছর কৃষিতে ডিজেলের ব্যবহার পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে জ্বালানি তেলের ব্যবহার বাড়লেও কৃষিতে কমেছে। বেশিরভাগ কৃষি সেচ যন্ত্র বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অনেকে সৌর বিদ্যুৎ নিয়েছেন। এজন্য কৃষিতে ডিজেল ব্যবহার কমেছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সহৃত্র জানায়, ২০১৩-১৪ অর্থ বছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কৃষিতে ছয় দশমিক ৫৭ শতাংশ ডিজেলের ব্যবহার কমেছে। তবে দেশের উত্তরাঞ্চলে ডিজেলের ব্যবহার কমার হার দ্বিগুণ। অর্থাৎ ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ ডিজেল ব্যবহার কমেছে। যদিও এই সময় সারাদেশে মোট ডিজেলের ব্যবহার দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়েছে।
জ্বালানি সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী এবিষয়ে এনার্জি বাংলাকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতে উন্নতি হওয়ায় ডিজেলের ব্যবহার কমেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার উপর চাপও পর্যায়ত্রক্রমে কমবে। অনেকে কৃষি সেচ কাজে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। এজন্যও ডিজেলের ব্যবহার কমেছে। এটা একটা ইতিবাচক বিষয়।
সূর জানায়, ২০১৩-১৪ অর্থ বছর দেশে কৃষি কাজে ডিজেল ব্যবহার হয়েছে নয় লাখ ৯০ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন। এই সময় দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্যবহার হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার ২৩১ মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থ বছর এই ব্যবহার কমে হয়েছে সারাদেশে নয় লাখ ২৫ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন এবং উত্তরাঞ্চলে এক লাখ ৬৬ হাজার ৪৯৫ মেট্রিক টন। সারাদেশে কৃষিতে ৬৫ হাজার ২০ মেট্রিক টন এবং উত্তরাঞ্চলে ২৭ হাজার ৭০৬ মেট্রিক টন ডিজেলের ব্যবহার কমেছে। চলতি কৃষি সেচ মৌসুচে এই ব্যবহার আরও কমতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে।
চলতি কৃষি সেচ মৌসুমে চলতি ডিসেম্বর থেকে আগামী মে মাস পর্যন্ত ১৭ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল ব্যবহার হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে।
এদিকে আসছে কৃষি সেচ মৌসুমে জ্বালানি তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেচ মৌসুমে জ্বালানি তেল সরবরাহে যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসকদের নিয়ে বৈঠক করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা ও পরিবহন নিশ্চিত করতে তেল পরিবহনের সময়সুচি আগে থেকেই কোস্ট গার্ড, নৌ বাহিনীকে জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে। সভায় জ্বালানি তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে বন্দরের জেটি ২৪ ঘন্টা চালু রাখা, নদী নাব্য ঠিক রাখতে ড্রেজিং করার বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ এর উদ্যোগ নেয়া, নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়।
এছাড়া সার্বিক নিয়ন্ত্রনের জন্য কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রন সেল গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সাথে করা হবে আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রন সেল। এছাড়া প্রত্যেক বিতরণ কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে নিজস্বভাবে নিয়ন্ত্রণ সেল খোলা হবে। সার্বক্ষনিকভাবে এই সেল থেকে তেল পরিবহন ও চাহিদা বিবেচনা করে তা সরবরাহ করা হবে। এছাড়া তেল পরিবহনের জন্য রেলওয়ে ও নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়কে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় সভাকক্ষে এনিয়ে আন্ত: মন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম, জ্বালানি সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী, বিপিসি চেয়ারম্যান এ এম বদরুদোজাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী কৃষি সেচ ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তেল সরবরাহের তাগিদ দেন। সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে দ্বিস্তরবিশিষ্টর জাহাজ ছাড়া তেল বহন না করার নির্দেশ দেন। বিদ্যুৎ সচিব বলেন, জ্বালানি তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে যে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে তা মাঠ পর্যায়ে পৌছানো জরুরী। জ্বালানি সচিব বলেন, তেল পরিবহণের ক্ষেত্রে জাহাজে ইকোসিস্টেম, জিপিএসসহ নানা সুবিধা থাকা জরুরী। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে তিনি এই বিষয়গুলো দেখে জাহাজের অনুমোদন দেয়ার নির্দেশ দেন।