২০১৫ সালে পাঁচটি বিষয় তেলের মূল্যকে প্রভাবিত করবে
তেলের বাজার বিশ্বে সবসময় আলোচনা থাকে। যেহেতু নতুন বছরে পা ফেলেছি তাই তেলের বাজার ও মজুদ সম্পর্কে অনেক কিছু ভাবতে পারি। ২০১৪ সালের তেলের বাজার ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এই সময় তেলের দাম ছয় মাসের মধ্যে অর্ধেকের নেমে আসতে দেখেছে বিশ্ব। তবে এখন বড় প্রশ্ন ২০১৫ সালে তেলের মুল্য কত হবে ? এখন তেলের মুল্য অস্থিতিশীল ভাবে কমছে। অথচ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও উৎপাদিত অঞ্চলগুলো তেলের দাম নিয়ন্ত্রন করে। তারা অল্প সময়ের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে মধ্যপন্থা ও দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য ঠিক করে তেলের বাজারে প্রভাব ফেলে দাম বাড়াতে পারে। বড় প্রশ্ন হল তারা কখন ও কী পরিমানে দাম বাড়াবে? অর্থাৎ ২০১৫ সালে তেলের দাম কত হবে?
এই সস্পর্কে প্রত্যেকের জানার ইচ্ছা থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি বিষয় আছে যা সামনের ১২ মাসে তেলের দাম বাড়াতে নির্দেশনা দেবে।
চীনের অর্থনীতি : চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোক্তা এবং ২০১৩ সালে সবচেয়ে বেশি তরল জ্বালানী আমদানী কারক হিসাবে আমেরিকাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। অধিক গুরুত্ত্বের সাথে বিবেচনা করে বলা যায়, দাম কেমন হবে তার উপর নির্ভর করে চীনে সামনের বছর গুলোতে তেলের ব্যবহার বাড়বে । ইআইএ এর ধারনা অনুযায়ী, চীন ২০১২ সালের তুলনায় ২০২০ সালে প্রতিদিন ৩০ লাখ ব্যারেল বেশি ব্যবহার করতে পারে যা ঐ সময়ে বিশ্ব চাহিদার এক সিকি । যদিও অনেক অনিশ্চয়তা আছে, হতাশা জড়িয়ে আছে, আটকে আছে দীর্ঘ দিনের ধীর গতির বাষিক প্রবৃদ্ধি। দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়া চীনের অর্থনীতি ২০১৫ সালে তেলের মূল্যের উপর প্রভাব ফেলবে ।
আমেরিকান তেল : ২০১৪ সালের শেষের দিকে আমেরিকা নয় বিলিয়ন ব্যারেল এর বেশি তেল উত্তোলন করেছিল যা কিনা ২০০৭ সালের চেয়ে ৮০ ভাগ বেশি । এই উত্তোলিত তেলের পরিমাণ বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত সরবরাহ সৃষ্টি করা হয়েছিল যা ২০১৪ সালে তেলের দাম কমাতে সাহায্যে করেছিল। এই ভাবে উত্তোলন করা ছিল নিজেদের পায়ে কুড়াল মারার মত, তবে সব চেয়ে বড় বিষয় আমেরিকার উত্তোলনকারীরা প্রভাব খাটিয়েছিল কীভাবে তেলের দাম ৬০ ডলারের নিচে নিয়ে আসা যায়। কৌশল বার বার ব্যর্থ হয়েছে, খরচও কাজে আসেনি, কিন্তু উত্তোলন ছিল স্বস্থির। যদি কারখানাগুলো বর্তমান মূল্য ধরে রাখতে পারে অথবা উৎপাদন কমানো শুরু করে তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ ও দামের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে ।
চাহিদা বৃদ্ধি : কম দামই এক সময় দাম বাড়ার কারন হয়। সরবরাহ ও চাহিদার দিক হিসাব করে সস্তা দাম প্রয়োগ করা যেতে পারে । দ্রুত জ্বালানী তেল বিক্রয় কী পুনরায় চাহিদা বাড়াবে? কিছু কিছু দেশে তেলের দাম অনেক বেশি নিয়ন্ত্রন করা হয়। তখন খুচরা পর্যায়ে ঐ সব দেশে একটুকুও প্রভাব পড়ে না। দেশগুলোর মধ্যে যেমন ইন্দোনেশিয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে বিভক্ত যা অর্থ ভান্ডার হিসাবে পরিচিত। কিন্তু তারা ভোক্তাদের সুবিধা কমায়। যায় হোক এখন আমেরিকাতে পেট্রোল জাত দ্রব্যের দাম প্রতি গ্যালোনে ২ দশমিক ৪০ ডলারের কম যা ২০১৪ সালের মাঝামাঝি থেকে ৩৫ ভাগের নিচে। এই রকম দামের কারনে পেট্রোল জাত দ্রব্যের ব্যবহার উচ্চ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল । ২০০৭ সাল থেকে ২০১৪ সালের শেষ দিন পর্যন্ত আমেরিকায় পেট্রোল জাত দ্রব্য সর্বোচ্চ মাত্রায় ব্যবহার হয়েছিল। কম দাম সব সময় খুব দ্রুত চাহিদা বাড়াতে পারে যা প্রায় সময় দাম বাড়াতে সাহায্য করে।
ওপেকের কার্যক্রম: গত বছর উল্রেখযোগ্য পরিমান দাম কমে যাওয়ার জন্য ওপেকের অনেক সুনাম (অথবা দুর্নাম) হয়েছিল । তেল উত্তোলন পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত রাখার জন্য অনেক বিশেষজ্ঞ তাদেরকে অবান্তর ঘোষনা করেছিল । তবে পরিষ্কার বিষয়, সংস্থাটির নভেম্বর মাসের সভার পর তেলের দাম কমেছিল । এই জন্য ওপেক ও সৌদিআরব পরিষ্কার ও দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়ে ঘোষনা করেছে তেলের উত্তোলন হ্রাস না করার । যায় হোক ২০১৫ সালের মধ্যে তেলের দাম বাড়বে তা সত্যে পরিনত হবে ।
ভুরাজনৈতিক সংকট : এটা খুব বেশি আগের কথা নয় একটি নগন্য দূষ্কৃতিকারী গোষ্ঠি তেলের মূল্যকে নিয়ে গিয়েছিল আকাশচুম্বী। উদাহরণ স্বরূপ, ২০১৪ সালের প্রথম দিকে লিবিয়ার সংঘর্ষে তেল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়ে দাম বাড়াতে অবদান রেখেছিল। ইরাকের আইএসআইএস বাহিনী দেশের বিভিন্ন অংশে ধ্বংস যজ্ঞ সৃষ্টি করায় তেলের সরবরাহ বাধা প্রাপ্ত হয়েছিল। ফলে তেলের মূল্যের উপর ভয়ের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তখন ও ভ‚রাজনৈতিক সংকটের প্রভাব স্বাভাবিক দামের উপর অনেক কম ছিল। ২০১৪ সালের শেষ সপ্তাহের দিকে লিবিয়ায় আবারও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তেলের দাম অল্প বাড়ায় বাজারে স্মরণকালের বড় বড় ঘটনা ঘটতে থাকে । তথাপি ইতিহাসের ঘটনা প্রবাহে দেখা গেছে ভুরাজনৈতিক সংকট অল্প সময়ে মধ্যে তেলের মহৃল্য বাড়াতে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রভাবক হিসাবে কাজ করে।
লেখক: আন্তর্জাতিক তেল বিশেষজ্ঞ
অনুবাদ: রুহুল আমিন