২০৩০ সালে বিশ্বে আরও ১০ কোটি মানুষ দরিদ্র হবে

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের আরও ১০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়বে। অতিদরিদ্র হবে প্রায় ১ কোটি মানুষ। সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের কবলে পড়বে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ও আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর মানুষ। গতকাল সোমবার বিশ্বব্যাংক গ্রুপ থেকে প্রকাশিত জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
প্যারিসে আসন্ন বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের আগে ‘শক ওয়েভ: ম্যানেজিং দ্য ইমপেক্টস অব ক্লাইমেট চেঞ্জ অন পোভার্টি’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতিমধ্যে তাপপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি ও বন্যার মতো দুর্যোগের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। দ্রুততার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন-সহিষ্ণু বা ক্লাইমেট স্মার্ট উন্নয়ন কৌশল না নিলে ওই দরিদ্রদের সুরক্ষা দেওয়া যাবে না।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ১৯৯৮ সালের বন্যা ও ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলা কোন ধরনের আয়ের মানুষের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে তার বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখানো হয়েছে, ১৯৯৮ সালের বন্যায় ৭৫ শতাংশ গরিব ও ৭১ শতাংশ গরিব নয় (নন-পুওর) এমন মানুষ ক্ষতির মুখে পড়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানার পর ক্ষতিগ্রস্ত ২৫টি গ্রামের ওপর একটি জরিপ চালানো হয়। তাতে দেখা গেছে, ওই গ্রামগুলোর ২৫ শতাংশ দরিদ্র ও ১৪ শতাংশ দরিদ্র নয় এমন জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কর্মহীন মানুষের সংখ্যা ১১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৩ শতাংশ হয়। গড় মাথাপিছু আয় ১৫ হাজার টাকা থেকে কমে ১০ হাজার টাকা হয়।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়াং কিম প্রতিবেদনটি সম্পর্কে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন দরিদ্রদের সবচেয়ে কঠিনভাবে আঘাত করবে। আমাদের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিদারিদ্র্যের কবলে পড়তে যাওয়া জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করা।’
প্রতিবেদনটির ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত প্রথম আলোকে বলেন, এই প্রতিবেদন থেকে আমরা যে শিক্ষাটি পেতে পারি তা হচ্ছে দরিদ্রদের টার্গেট করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার উদ্যোগ বেশি নিতে হবে। যাতে তারা নতুন করে দারিদ্র্যের কবলে না পড়ে।
প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমাজের কোন আয়ের মানুষ কী ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত ও বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যা, খরা ও তাপপ্রবাহের ফলে দরিদ্র মানুষ তাদের সম্পদ হারাচ্ছে। বিশ্বের ৫২টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে, এসব দেশের ৮৫ শতাংশ গরিব মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ফসলের ৫ শতাংশ ও ২০৮০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ কমে যাবে। ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া ও খর্বাকৃতি মানুষের সংখ্যা বাড়বে। ২০৩০ সালের মধ্যে আফ্রিকায় খাদ্যের দাম ১২ শতাংশ ও ২০৮০ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ বাড়বে। আফ্রিকার দেশগুলোর অধিবাসীদের মাথাপিছু আয়ের ৬০ শতাংশ খাদ্য কেনায় ব্যবহৃত হয়।
প্রতিবেদনে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য লবণাক্ত ও খরাসহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন, প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলায় সক্ষম এমন কৃষিপ্রযুক্তি উদ্ভাবনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে সম্ভাব্য রোগবালাই মোকাবিলায় শক্তিশালী ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।