২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য থেকে: কতটা যৌক্তিক?
নিজস্ব প্রতিবেদক:
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে ২০৪১ সারের মধ্যে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ করা হবে নবায়নযোগ্য থেকে। আর ২০৩০ সালের মধ্যে এ থেকে ৪ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বা মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ উৎপাদনের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
কার্বণ নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর জন্যই মূলত এই উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছে সংশ্লিষ্ঠরা।
তবে এই সময়ে এই পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদন কী আদৌ সম্ভব?
২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির যে লক্ষ ঠিক করা হয়েছে তার অর্ধেক অর্থাৎ ২ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াট সৌর থেকে এবং পানি ও বায়ু দিয়ে যথাক্রমে ১ হাজার ও ৫৯৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে।
কার্বন নিঃসরণ কমাতে জাতীয় অবদান (ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশান – এনডিসি) হালনাগাদ করেছে বাংলাদেশ। হালনাগাদ করা হচ্ছে মহাপরিকল্পনাও। এই সব পরিকল্পনায় নতুন লক্ষ ঠিক করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের মহাপরিকল্পনা ও এনডিসিতে শুন্য কার্বন নির্গনে পৌঁছাতে বাংলাদেশ কী করবে তা তুলে ধরা হয়েছে। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) গ্লাসগোতে শেষ হওয়া জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষ সম্মেলনে এই পরিকল্পনার কথা উপস্থাপন করেছে।
কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অর্থায়ন, প্রযুক্তি এবং সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তার প্রয়োজন বলে মনে করছে বাংলাদেশ।
আগামী নয় বছরে নবায়নযোগ্য থেকে এই পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব কিনা জানতে চাইলে স্রেডা’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন এনার্জি বাংলাকে বলেন, এটা সম্ভব। যদি অর্থায়ন পাওয়া যায় তবে সম্ভব। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। ছোট দেশ। জনসংখ্যা বেশি। সৌর বিদ্যুতে অনেক জায়গা লাগে। বিনিয়োগও বেশি। তারপরও দীর্ঘ মেয়াদের কথা চিন্তা করে, জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে আমাদের এই উদ্যোগে যেতে হবে। এভাবে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেশ উন্নতি করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ি আগানো হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ খুবই কম কার্বন নির্গমন করে। বছরে মাত্র দশমিক ৮৯ মেট্রিক টন। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ ১ হাজার মেগাওয়াটের চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদিত হবে। কিছু বড় আকারের সৌরশক্তি চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের কাজ এখন বাস্তবায়ন পর্যায়ে আছে। নবায়নযোগ্য উৎস থেকে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ চলমান।
বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান ১ শতাংশেরও কম। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে জলবায়ু বিপর্যয় ঘটার সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ঝুঁকিতে আছে এমন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
২০০৮ সালের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫ শতাংশ এবং ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করার কথা ছিল। কিন্তু সে লক্ষ পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে, বাংলাদেশে ১৪৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। যার স্থাপিত ক্ষমতা প্রায় ২৪ হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে ৭৭৬ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য উৎস থেকে হচ্ছে। যা মোট ক্ষমতার প্রায় ৩ শতাংশ।
বর্তমানে ৯টি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে, যেখান থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এ ছাড়াও ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে।