ভুটানে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সমঝোতা স্বাক্ষর হচ্ছে

এবার ভুটানে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে সরকার। ভুটানের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতায় বাংলাদেশের সঙ্গে থাকবে ভারত। এর মধ্যে সমঝোতা স্মারকের খসড়া বাংলাদেশ এবং ভারতে পাঠিয়েছে ভুটান। বিশাল জলশক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভারত এবং বাংলাদেশের বিনিয়োগ প্রত্যাশা করছে ভুটান। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে খুব শীঘ্রই এমওইউটি স্বাক্ষর হবে।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে দাতারাও আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ বিনিময়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুৎ বিনিময় এই অঞ্চলের জন্য বড় একটি উদাহরণ হিসেবে দেখছে তারা। তাদের পক্ষ থেকে ভুটান এবং নেপালের জলরাশিকে কাজে লাগানোর তাগাদা রয়েছে দীর্ঘদিন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে জাতীয় সংসদে এক বক্তৃতায় বলেন, আমরা ভুটান এবং নেপালে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করব। পরবর্তীতে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, দেশ দুটিতে এক বিলিয়ন ডলার জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। দ্রুত বিনিয়োগ করার জন্যই ভুটানের সঙ্গে আলোচনায় বসে বাংলাদেশ এবং ভারত। যার প্রেক্ষিতে ভুটান একটি এমওইউ প্রস্তুত করে ভারত এবং বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এখানে এমওইউটির বিভিন্ন দিক সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। গত ২৬ জানুয়ারি বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলামের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক আহ্বান করে বিদ্যুত বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, আপাতত সরকারী পর্যায়ে ভুটানে প্রকল্প করা হবে। তবে দেশের বেসরকারী খাতও ভবিষ্যতে ভুটানে বিনিয়োগ করতে পারবে। ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি ইতোমধ্যে ভুটান এবং নেপালে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। সেখান থেকে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ কেনার প্রস্তাবও দিচ্ছে তারা। একই ধরনের প্রকল্প ভুটানেও দেশের বেসরকারী খাত করতে পারে। তিনি বলেন, ভূরাজনৈতিক অবস্থানের কারণে ভারত খুব গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশও ভুটানের জলবিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করবে। ভারত ইতোমধ্যে এসব উদ্যোগে নিজেদের সায় থাকার কথা স্পষ্ট করেছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে বুধবার বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের আট সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাত করেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী ভুটানের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সহায়তার আহ্বান জানান। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে দেশের বিদ্যুৎ বাণিজ্যের বিষয়টি এ সময় আলোচনায় আসে। ওই বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের জ্বালানি উপদেষ্টা রাম বিনয় শাহী বলেন, ভুটান-ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আঞ্চলিক সংযোগ সম্প্রসারণ করতে বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী মন্ত্রী পর্যায় ও সচিব পর্যায় বৈঠকে আলোচনা করা হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, নেপাল এবং ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানির ক্ষেত্রে প্রধান বাঁধা ছিল ভারত। বাংলাদেশ চাইলেও ভারত এ বিষয়ে আলোচনায় সম্মত ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি ভারত বিষয়টিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নেপাল, ভুটান, ভারত, বাংলাদেশ মিলে দিল্লীতে একটি চতুর্দেশীয় বৈঠক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। এখন ভারতের প্রতিবন্ধকতা না থাকলে দ্রুতই এই খাতের সম্প্রসারণ সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

ভুটানে ২৫ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের ঋতুতে পার্থক্য রয়েছে। গ্রীষ্মে বাংলাদেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ভুটানে শীতকালে চাহিদা কমে যায়।

শীতকালে বাংলাদেশের যখন চাহিদা কমে যায়, ভুটানে থাকবে তখন সর্বোচ্চ চাহিদা। তখন উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভুটান নেবে। আর গ্রীষ্মে যখন বাংলাদেশের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকবে তখন সবটাই বাংলাদেশ আমদানি করতে পারবে।

এর আগে ভুটানে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে জাপানি দাতা সংস্থা জাইকা। জাইকা একই সঙ্গে কেন্দ্র এবং সঞ্চালন লাইন নির্মাণে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।

ভুটান বর্তমানে এক হাজার ৪৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। যার সবটাই জলবিদ্যুৎ থেকে। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় ২৮৮ মেগাওয়াট উৎপাদন কমে যায়। বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্রই ভারতীয় অনুদান ও ঋণে নির্মাণ করা হয়েছে। সেখান থেকে স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ আমদানি করছে ভারত।

২০২০ সালের মধ্যে আরও ১০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে ভুটান। যার সবটাই ভারত আমদানি করবে। এ জন্য ভারতের সহযোগিতায় ১০টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ছয় হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। ২০১৯ সালের মধ্যে নতুন তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে যাবে। এর বাইরে আরও ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো জলশক্তি রয়েছে দেশটির।

ভুটানের পাশাপাশি নেপালেও যৌথ বিনিয়োগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া ভারত থেকে বর্তমানে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। শীঘ্রই আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। এ ছাড়া ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে।ভুটানে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সমঝোতা স্বাক্ষর হচ্ছে।