পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র: ফ্রান্সের পরে চীন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় অবস্থানে ফ্রান্স। তৃতীয় অবস্থানে চীন। মোট পরিমাণের ক্ষেত্রে চীনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক উৎপাদন হয়।
৭ই আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত শীর্ষ পাঁচটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার দেশের তালিকায় এর পরে আছে রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া।
ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন এডমিনিসট্রেশন (ইআইএ) এর তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও দেখা গেছে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী ফ্রান্সের চেয়ে প্রায় ৪০ ভাগ বেশি।
দেশের মোট বিদ্যুৎ সরবরাহের অংশ হিসেবে আবার শীর্ষে ফ্রান্স। ফ্রান্সে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ৬৮ শতাংশ উৎপাদন হয় পরমাণু থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৯৫ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন কিলোওয়াট। যা দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১৯ শতাংশ।
ফ্রান্সে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬১ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন কিলোওয়াট। যা দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৬৮ শতাংশ।
চীনে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫৩ দশমিক ২৬ মিলিয়ন কিলোওয়াট। যা দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫ শতাংশ। মোট পারমাণবিক বিদ্যুতের ধারণক্ষমতা এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ উভয় ক্ষেত্রেই দেশটি বিশ্বের তৃতীয় স্থানে, যা বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত পারমাণবিক শক্তির প্রায় এক দশমাংশ।
রাশিয়ায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট। যা দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ২০ শতাংশ।
দক্ষিণ কোরিয়ায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন কিলোওয়াট। যা দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ২৬ শতাংশ।
২০২৩ সালের ১লা পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে
২৮টি রাজ্যে ৫৪টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৯৩টি পারমাণবিক চুল্লি আছে। চলমান এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ১৯টিতে একটি চুল্লী, ৩১টির দুটি এবং ৪টিতে তিনটি চুল্লি আছে। ১৯৯০ সাল থেকে মোট বার্ষিক বিদ্যুতের প্রায় ২০ শতাংশ পরমাণু থেকে সরবরাহ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, চীনে ৫৫টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে যার ক্ষমতা ৫৭ গিগাওয়াট। ২২টি নির্মাণাধীন যার ক্ষমতা ২৪ গিগাওয়াট। ৮৮ গিগাওয়াটের ৭০টির বেশি পরিকল্পনাধীন।
পারমাণবিক বিদ্যুতে এগুচ্ছে চীন:
উচ্চ প্রযুক্তির পারমাণবিক জ্বালানি ব্যবহারে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন ফাউন্ডেশন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি জানানো হয়, এই মুহূর্তে চীনে নির্মাণাধীন ২৭টি পারমাণবিক চুল্লি আছে। এগুলোর গড় নির্মাণকাল প্রায় সাত বছর। অন্যান্য দেশের তুলনায় যা দ্রুতই।
রাষ্ট্রায়াত্ত সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও অর্থায়নের কারণেই চীনের এই খাতে এত দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর দেওয়া সহজ শর্তের ঋণ খাতটিকে এগিয়ে দিয়েছে অনেকখানি। চীনের ব্যাংকগুলো এ খাতে মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। পশ্চিমা দেশগুলোতে এ ধরনের প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণে সুদের হার চীনের চেয়ে কয়েকগুণ।
চীন গত বছরের ডিসেম্বরে শিদাও উপসাগরের উপকূলে বিশ্বের প্রথম চতুর্থ প্রজন্মের ‘গ্যাস কুলড’ পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন করে। তারা দাবি করে, এই পারমাণবিক চুল্লিতে এমন দুই হাজার ২০০টি নতুন উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে; যা আগে কখনোই ব্যবহার করা হয়নি। এই চুল্লির ৯৩ দশমিক চার শতাংশ যন্ত্রাংশের জোগান দিয়েছে চীনই। ফলে খরচের সাথে আমদানি দীর্ঘসূত্রিতাও কমেছে। এতে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় দুটোই কমেছে।