মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর হওয়ার আগেই রেকর্ড

আসিফ সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম ( কালের কণ্ঠ): 

কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ শেষে চালুর লক্ষ্যমাত্রা ২০২৫ সালের মাঝামাঝিতে, তার আগেই সেখানে নির্মিত দুটি জেটিতে ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিদ্যুেকন্দ্রের নির্মাণসামগ্রী বোঝাই জাহাজ ভেড়ানো শুরু হয়েছে। সেখানে এখন এত বেশি জাহাজ আসছে মাঝেমধ্যে অপেক্ষমাণ জাহাজের লাইনও তৈরি হচ্ছে। ২০২১ সালে সেই জেটিতে মোট ৪৯টি পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়েছিল; আর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬৭টি জাহাজ ভিড়েছে। সব জাহাজই সরাসরি মাতারবাড়ী এসেছে জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে।

মূলত মাতারবাড়ীতে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণসামগ্রী আনার জন্য এই দুটি জেটি নির্মিত হয়েছে। আর এর পাশেই গড়ে উঠছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। সেই জেটিতে ২০২১ সালে ৪৯টি জাহাজে এসেছে ৫৭ হাজার টন পণ্য; এসব জাহাজ ভিড়িয়ে চট্টগ্রাম বন্দর আয় করেছে তিন কোটি টাকার রাজস্ব। ২০২২ সালের হিসাব পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম বন্দর জলসীমার মধ্যে থাকায় মাতারবাড়ী চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনেই পরিচালিত হচ্ছে। ফলে সেই বন্দর থেকে আয় চট্টগ্রাম বন্দরের তহবিলে যোগ হচ্ছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানামার পরিমাণের সঙ্গে মাতারবাড়ীর পণ্য ওঠানামাও যুক্ত হয়েছে প্রথমবার। এর মধ্য দিয়ে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর দেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনা জানান দিচ্ছে। কিন্তু গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আগে পণ্য পরিবহনে সড়ক তৈরি না হওয়ায় প্রথমদিকে ভোগান্তির শঙ্কাও করছেন ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজারের মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে প্রথম পণ্যবাহী জাহাজ ভেড়ে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বরে। তখন জাহাজ প্রবেশের নির্মিত চ্যানেল দিয়ে প্রথমবার প্রবেশ করেছিল বাণিজ্যিক জাহাজ ‘ভেনাস ট্রায়াম্প’। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছিল মাতারবাড়ী চ্যানেল। মূলত মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মিত হেভি লিফট বা ভারী কার্গো নামানোর জন্য এই জেটি ব্যবহৃত হচ্ছিল।

এরপর থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ১৭টি বাণিজ্যিক জাহাজ বিদ্যুেকন্দ্রের নির্মাণসামগ্রী নিয়ে জেটিতে ভিড়েছিল। তখন সেখানে জেটি ছিল একটি। ২০২১ সালের ১৫ জুলাই নতুন আরেকটি জেটি চালু হয়। এরপর একসঙ্গে দুটি জেটিতে দুই জাহাজ ভিড়তে শুরু করে। বছর শেষে মোট ৪৯ জাহাজ ভেড়ার রেকর্ড করে মাতারবাড়ী।

মাতারবাড়ীতে জাহাজ ভেড়ানোর মূল সমন্বয়কারী এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সহকারী হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন আতাউল হাকিম সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রথমদিকে একটি জেটি থাকায় জাহাজের সংখ্যা কম ছিল; দুটি জেটি আসায় জাহাজের সংখ্যাও অনেক বেড়ে যায়। মাত্র এক বছরেই আমরা ৪৯টি পণ্যবাহী জাহাজ জেটিতে ভেড়ার রেকর্ড করেছে। এখন শুধু কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণসামগ্রী বোঝাই জাহাজই জেটিতে ভিড়ছে। পণ্যবাহী অন্য জাহাজ জেটিতে আসার সুযোগ এখন নেই। ভবিষ্যতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে এখানে দেশের সবচেয়ে বড় জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারবে। ’

তিনি আশা করেন, ‘২০২২ সালে আমরা মোট ১০০ জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের আশা করছি; এই পরিমাণ জাহাজ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয়ও সরাসরি দ্বিগুণ হবে। ’