সেচ মৌসুমে এবার বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৬ হাজার মেগাওয়াট
নিজস্ব প্রতিবেদক/বিডিনিউজ:
এ বছর সেচ মৌসুমে দেশে বিদ্যুতের দৈনিক চাহিদা প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বেড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
মঙ্গলবার বিদ্যুৎ ভবনে সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বাড়তি চাহিদা পূরণে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন।
গত বছর সেচ মৌসুমে ১৬ এপ্রিলে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াটে উন্নীত হলেও তা পূরণ করা গিয়েছিল। কিন্তু গত জুন থেকে জ্বালানি সংকটের কারণে দৈনিক সর্বোচ্চ দুই হাজার মেটাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং দিতে হয়।
শীত শুরুর পর বিদ্যুতের চাহিদা নয় হাজার মেগাওয়াট থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে নেমে আসায় ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে লোডশেডিংয়ে যেতে হয়নি।
তবে সম্প্রতি কয়লা, তরল জ্বালানি ও গ্যাস সংকট আবার বেড়েছে। সোমবারও সাড়ে নয় হাজার মেগাওয়াট চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে সারাদেশে ৩০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং দিতে হয়েছিল। ১০ দিন আগেও লোডশেডিংয়ের মাত্রা দেড় হাজার মেগাওয়াটে উঠে গিয়েছিল।
এ পরিস্থিতিতে আগামী সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য।
মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক সম্মেলন শেষে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “সামনের মৌসুমে বিদ্যুৎ বিতরণের ক্ষেত্রে সেচকে যেন সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়, আমরা সেটা বলে দিয়েছি। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ ঘাটতির আশংকা দেখা দিলে তা সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিগুলোকে বিকল্প উপায়ে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।”
বিদ্যুৎ ভবনের অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে সেচ মৌসুম শুরু হয়, যা ৩১ মে পর্যন্ত চলে। এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
পিডিবির চাহিদা মত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয় সভায়। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বিপিসিকে চাহিদার অতিরিক্ত ফার্নেস অয়েল কিনে রাখার নির্দেশনা দেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলতি সেচ মৌসুমে মোট সেচ সংযোগের সংখ্যা ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫৬টি, যার জন্য বিদ্যুৎ লাগবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।
সেচ কাজ নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেন প্রতিমন্ত্রী। চলতি সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্যাস, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল সরবরাহ বৃদ্ধি করা; যে সব গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম, সেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্রাধিকারভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করা; জ্বালানি পরিবহনের ক্ষেত্রে যাতে কোনো সমস্যা না হয় তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয় সেখানে।
এছাড়া বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি), পেট্রোবাংলা ও বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে জ্বালানি তেল, গ্যাস এবং কয়লার সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করা; সেচ পাম্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য গ্রিড উপকেন্দ্র, সঞ্চালন লাইন, বিতরণ লাইন ও উপকেন্দ্রগুলো সংরক্ষণ ও মেরামত কাজ জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন করার কথাও আছে নির্দেশনায়।
ওভারলোডেড সাবস্টেশন ও সঞ্চালন লাইন আপ গ্রেডেশনের কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা; বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে ন্যূনতম দুই মাসের উৎপাদন সক্ষমতা রাখার জন্য জ্বালানি তেলের মজুদ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
বিপিসি, পেট্রোবাংলা, জন নিরাপত্তা বিভাগ, জ্বালানি বিভাগ, নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিসি তাদের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে সভায়।
আন্তঃমন্ত্রণালয় এই সমন্বয় সভায় বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)-এর চেয়ারম্যান সেলিম উদ্দিন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার ও পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।