নেপাল ভূটান থেকে বিদ্যুৎ আনতে করিডোর দেবে ভারত

নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনতে ভারতের করিডোর পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতের ভূখন্ডের উপর সঞ্চালন লাইন বসিয়ে বাংলাদেশ এই বিদ্যুৎ আনতে পারবে। এতে ভারতের কোন আপত্তি নেই। ভারতের উপর দিয়ে ভূটান থেকেও বিদ্যুৎ আনা হবে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ বিদ্যুৎ জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সাথে সচিবালয়ে তার অফিস কক্ষে সাক্ষাৎ করে একথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৌরালার সাথে দেখা করেও সম্প্রতি বাংলাদেশকে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন করতে ভারতের ভূখন্ড ব্যবহারে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন।
২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ার যে পরিকল্পনা করা হয়েছে সেখানে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে তিন হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার একটি বড় অংশ বাস্তবায়ন হবে নেপালের বিদ্যুৎ দিয়ে। কিন্তু সেখানে ভারত ছিল প্রধান বাধা। নেপাল ও ভূটান থেকে বিদ্যুৎ আনতে অবশ্যই ভারতের উপর দিয়ে আনতে হবে। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ নেপাল ও ভূটান থেকে বিদ্যুৎ আনার চেষ্টা করছে। ভারত এবিষয়ে আলোচনা করলেও বাংলাদেশকে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন করতে জমি ব্যবহারের সম্মতি দেয়নি। ভারতে সম্প্রতি নতুন সরকার আসার পরপরই এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ঠরা।
এবিষয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এটা আমাদের কূটনৈতিক জয়। শুধু নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার অনুমোতিই নয় বাংলাদেশে তারা এই খাতে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতেও আগ্রহী। তারা মনে করে বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আইনশৃংখলা পরিস্থিতি যেমন ভাল তেমনই বিনিয়োগ করার পরিবেশও অনেক ভাল।
নেপালে প্রায় ৮৩ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সম্ভবনা আছে। এরমধ্যে এখনই অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে ৪০ হাজার মেগাওয়াট মতার কেন্দ্র। এই সম্ভাবনাময় জায়গাতেই বাংলাদেশ বিনিয়োগ করতে চাই। নেপালও সম্মত আছে বাংলাদেশের সাথে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের।
সূত্র জানায়, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভূটান এই চারদেশীয় জোট আগামী বৈঠকে আন্তঃদেশীয় ট্রান্সমিশন লাইন করার বিষয়ে আলোচনা করে চূড়ান্ত নিদ্ধান্ত নেবে। ভারত সম্মত থাকায় এবিষয়ে আর কোন বাধা থাকলো না। চলতি বছরের শেষের দিকে দিল্লীতে চার দেশের যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে আগামী ডিসেম্বরে ভারতের ত্রিপুরার পালাটানা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে। এবং ভেড়ামারা দিয়ে ভারতের খোলা বাজার থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দ্রুত সময়ের মধ্যে আসবে বলে প্রতিমন্ত্রী সাথে হাইকমিশনারের বৈঠকে জানানো হয়। এসময় হাইকমিশনার বাংলাদেশে গ্যাস তেল অনুসন্ধানে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
উভয়ের বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহী ভারতীয় বেসরকারি কোম্পানীগুলো। বাংলাদেশের রাজনৈতির স্থিতীশীলতা এবং সম্ভাবনার বিষয়টি বিবেচনা করেই ভারতীয় কোম্পনিগুলো এ বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিনিয়োগে আগ্রহী কোম্পনিগুলোর মধ্যে ভারতের বিখ্যাত রিলায়েন্স গ্রুপও আছে। একই সঙ্গে আঞ্চলিক গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পেতেও ভারত সহযোগিতা করবে। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে ভারতের ভুমি ব্যবহার করতে দিতেও ভারতের সম্মতি আছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের হাই কমিশনার জানিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশ কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্সে) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ভারতীয় তেল গ্যাস উত্তোলন কোম্পানিগুলো কাজ করতে চায়। এ বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে সরকারকে প্রস্তাব দেবে। জ্বালানি তেল আমদানিতে খরচ কমাতে ভারত থেকে পাইলাইনে ডিজেল আমদানির বিষয়েও একটি কমিটি নানা বিষয় বিশ্লেষণ করছে। এছাড়া ত্রিদেশীয় পাইপলাইনে যুক্ত হতে চেষ্টা করছে সরকার।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণ একই সংস্কৃতির অংশ এবং তারা পরস্পর সহ-অবস্থানে থাকতে চায়। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্রয়োজন এবং তা ভারত, ভুটান ও নেপাল থেকে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সহযোগিতার মাধ্যমে হলে সকলেই লাভবান হবে। এ সময় তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিভিন্ন বিষয়, এলএনজি আঞ্চলিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
পঙ্কজ শরণ বলেন, রাজনৈতিক ও বিনিয়োগের পরিবেশ ভালো বলে ভারতের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। জ্বালানি ক্ষেত্রে যৌথ কাজ করতে ভারত আগ্রহী। ভারত বংলাদেশকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করবে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্য বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গতকাল নেপালের জ্বালানি মন্ত্রী রাধা কুমার গেওয়ালী তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন। আজ বুধবার সকাল ১১ টায় হোটেল সোনারগাঁ- এ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে নেপালের জ্বালানি মন্ত্রীর বৈঠক হবে। এ সময় ভারতের উপর দিয়ে বিদ্যুৎ আনার বিষয়ে দুদেশের মধ্যে সমঝোতা সই হবে।