প্রতিমাসে পাঁচ হাজার ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়
পুরানো এবং নানা দুর্ঘটনার কারণে দেশে প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ হাজার ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়। অব্যবস্থাপনা ও বিদ্যুৎ সরবরাহে অনিয়মের কারণে এসব ট্রান্সফরমার বেশি নষ্ট হয়। ক্ষমতার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহ হলে পুড়ে যাওয়ার ঘটনা বেশি ঘটে।
শহরের তুলনায় গ্রামে ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়ার ঘটনা বেশি। শহরের ট্রান্সফরমার পুড়ে গেলে বিতরণ কোম্পানিগুলো নিজেদের অর্থেই তা স্থাপন করে। কিন্তু গ্রামের পুড়ে যাওয়া ট্রান্সফরমার কিনতে হয় গ্রাহকদের নিজেদের টাকায়।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে এক কোটি ৬১ লাখ ০৬ হাজার ৯৪৫ দশমিক ৪ কেভিএ ক্ষমতার মোট সাত লাখ ২০ হাজার ৬০৯টি ট্রান্সফরমার রয়েছে। এরমধ্যে জুলাই মাসের হিসেব অনুযায়ি পুড়ে যাওয়া ট্রান্সফরমারের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৩৭৯টি।
মোট পুড়ে যাওয়া ট্রান্সফরমারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পুড়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) অধীন এলাকায়। আরইবির অধীন এলাকায় এক মাসে পুড়েছে মোট চার হাজার ৮২৭টি। এছাড়া বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) এলাকায় ৯৫টি এবং ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি) এলাকায় পুড়েছে ৭৬টি। এর বাইরে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ (ডেসকো) ও পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ওজোপাডিকো) অধীন এলাকায় ১৭টি করে ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে।
ডিপিডিসির পরিচালক (অপারেশন) মিজানুর রহমান বলেন, ডিপিডিসির প্রতিমাসেই প্রায় ৯০টি ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়। এরমধ্যে ৬০টিই পুড়ে যায় পুরানো হওয়ার কারণে। ডিপিডিসির অধীন এলাকায় এমন অনেক ট্রান্সফরমার আছে যেগুলো স্থাপন করা হয়েছিল ১৯৮০ সালে। পুরানো ট্রান্সফরমারগুলোতে তেলের গাদ জমে যায়, বৃষ্টি হলে পানি জমে যাওয়ার কারণে পুড়ে যায়। তিনি জানান, এইসব পুরানো ট্রান্সফরমারগুলো সম্প্রতি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে ডিপিডিসি। ২০ বছরের পুরানো এবং অবস্থা বেশি ভাল না মনে হলেই সেসব ট্রান্সফরমার খুলে সেখানে নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে। পরে খুলে নেয়া ট্রান্সফরমারটি কারখানায় নিয়ে তেল পাল্টিয়ে ভালভাবে সংস্কার করে আবার তা স্থাপন করা হচ্ছে। এতে ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়ার সংখ্যা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে আরইবির চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন বলেন, আরইবিতে মোট ৬ লাখ ৮১ হাজার ট্রান্সফরমার আছে। এর তুলনায় পুড়ে যাওয়ার পরিমাণ মাত্র ০ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে এই পুড়ে যাওয়ার সংখ্যা কমাতে হবে। আমরা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, পুড়ে যাওয়ার মূল কারণ বিতরণ ব্যবস্থা এবং ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার। গ্রাহকরা সংযোগ নেয়ার সময় যে পরিমাণ লোডের কথা বলে পরবর্তীতে লোড বাড়িয়ে ফেলে। অতিরিক্ত লোডের কারণে ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়। চেয়ারম্যান জানান, এতদিন ট্রান্সফরমার পুড়ে গেলে গ্রাহকদের কিনতে হতো। আগামীতে আর কিনতে হবে না। আরইবি কর্তৃপক্ষ ট্রান্সফরমার কিনে দিবে। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি নতুন নীতি করেছে আরইবি। চলতি বছরের শেষদিকে এই নীতি কার্যকরা করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বর্তমানে দেশের ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার আছে ৭৬ হাজার ৪৮৩টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ওভারলোডেড ট্রান্সফরমারও আছে আরইবিতে। আরইবির অধীন এলাকায় মোট ৭৩ হাজার ৬৭৮টি ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার আছে। এছাড়া পিডিবির দুই হাজার ৩৭টি, ডিপিডিসির ৭০২টি, ডেসকোর ৬২টি এবং ওজোপাডিকোর চারটি ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড অবস্থায় আছে।