করোনা মোকাবেলায় নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে

করনাকালির বিদ্যুৎ-জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এর সাথে।
করোনাজনিত সঙ্গনিরোধ এর বাধ্যবাধকতার সময় মুখোমুখি বসে সাক্ষাৎকার নেয়ার বা আলোচনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের কথা সবারই জানা। সেই বিধিনিষেধ মেনে এবং নিয়ম কানুন মেনে এই সাক্ষাৎকার নেয়া হয় নসরুল হামিদের বাসভবনে। বিস্তারিত আলোচনার সংক্ষিপ্ত তুলে ধরা হলো।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অরুণ কর্মকার

করনাকালে কি অবস্থা চলছে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে?
নসরুল হামিদ: ভাবা হয়েছিল এ বছর গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা ১৪-১৫ হাজার মেগাওয়াট হবে। কিন্তু ছয় হাজারের বেশি হচ্ছে না। সর্বোচ্চ চাহিদার মৌসুমীমে দুই মাস এই অবস্থা চলছে। ফলে বিদ্যুতের অলস উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
করোনার কারণে জ্বালানি তেলের দাম ইতিহাসে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গেছে। কিন্তু চাহিদা না থাকায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালানো যাচ্ছে না। আবার তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেশিরভাগ বেসরকারি উদ্যোক্তাদের। সেগুলো চালানো না হলেও ক্যাপাসিটি চার্জ তো দিতেই হচ্ছে।
গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলোর ক্ষেত্রে প্রায় একই রকম সমস্যা। আমদানি করা এলএনজি ব্যবহার না করলেও এফএসআরইউ চার্জ দিতে হবে। দেশের গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভাবতে হচ্ছে ক্ষেত্রগুলোর গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ার বিষয়টি। একাধিক ক্ষেত্রে ওয়েলহেড কম্প্রেসার প্রক্রিয়া চলছিল। সেটাও তো থেমে গেল। এখন ভাবা হচ্ছে বিশেষ আইনের আওতায় কমপ্রেসরের কাজ দ্রুত করা হবে কিনা। কারণ কোন ক্ষেত্রের গ্যাসের চাপ এক হাজার পিএসআই এর নিচে নেমে গেলে কম্প্রেসার দিয়েও কোন ফল হবে না।

কিছু কিছু কারখানা এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তো খোলার প্রক্রিয়া চলছে

নসরুল হামিদ: হ্যাঁ পোশাক কারখানাসহ রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা পর্যায়ক্রমে চালু করার একটা প্রক্রিয়া চলছে। সেটা হলে গ্যাস বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে পারে।কিন্তু বিজিএমইএ বিকেএমইএ সহ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের কয়েকটি অ্যাসোসিয়েশন ইতিমধ্যে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে তারা কারখানা চালু করলেও এখন গ্যাস বিদ্যুতের বিল দিতে পারবেনা। তাদের রপ্তানি আয় হাতে পেতে ১৮০ দিন সময় লাগবে এর মধ্যে তারা বিল দিতে অপারগ।

বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিল পরিস্থিতি কি?

নসরুল হামিদ: খুব খারাপ। ১০ শতাংশের কাছাকাছি নেমে গেছে। একেতো চাহিদা না থাকায় সরবরাহ কমছে। তার উপর বিল পাচ্ছে না। এই অবস্থায় বিতরণ কোম্পানিগুলো পিডিবির বিল দিতে পারছে না। এই অবস্থার মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবার দুই হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। সব মিলে এই খাতে একটা বড় ধরনের আর্থিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। এখান থেকে বের হয়ে আসতে সময় লাগবে। আর নিঃসন্দেহে আগামী বছর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের ভর্তুকি বাড়াতে হবে।

উন্নয়ন প্রকল্প গুলোর অবস্থা কি?
নসরুল হামিদ: ২/১টির কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ। যেমন রংপুরের পাইপলাইন প্রকল্প। তবে বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। সীমিত আকারে। এর ফলে প্রকল্পগুলোর কাজ পিছিয়ে পড়ছে।কোন কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়কাল দু’বছর পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে এবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপি কতটা বাস্তবায়ন করা যাবে সেটাও একটা চিন্তার বিষয়। যদিও ইতিমধ্যে আমাদের মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন প্রায় ৬০ শতাংশ হয়ে গেছে।
এরই মধ্যে আবার তো নতুন বাজেটের সময় আসছে। সেখানেও নতুন অর্থবছরের উন্নয়ন কর্মসূচিতে কোন কোন প্রকল্পভুক্ত করা হবে সেটা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে।

করোনাকালে আশাবাদী হওয়ার মতো কি কিছুই নেই?

নসরুল হামিদ: নিশ্চয়ই আছে। এই সময় সবচেয়ে বড় একটা সুবিধা হচ্ছে, যে সব সমস্যার কথা বললাম, সেগুলো থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা করা হচ্ছে। আমরা প্রায় প্রতিদিনই অনলাইনে সভা করছি। সেখানে এসব বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা হচ্ছে। আমরা আগামী বছরে দেশের জ্বালানী সম্পদ আহরণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাই। স্থলভাগের গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানো হবে। এজন্য বাপেক্সের পাশাপাশি অন্য কোম্পানি কাজে লাগানো হবে। এবং বিদ্যমান উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি পিএসসি পর্যালোচনা করা হবে। ভোলার গ্যাসের আরও বেশি ব্যবহার নিশ্চিত করা, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের অবকাঠামো তৈরি করা এসব কাজের পরিকল্পনা আমরা এই সময় করছি। আশা করছি সব কিছু ঠিকভাবে চলবে।

করোনা জনিত বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যেও সময় দেয়ার জন্য এনার্জি বাংলার পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

নসরুল হামিদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।